মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
হত্যার উদ্দেশ্যে অনাধিকার প্রবেশ পূর্বক মারধর করে জখম, চুরি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় আসামীকে ১০০ টি বৃক্ষ রোপন, রোপিত বৃক্ষ পরবর্তী ২ বছর পর্যন্ত পরিচর্যা করা সহ বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ করতে আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী বুধবার ২৯ ডিসেম্বর অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁর আদালতে ব্যতিক্রমী এ রায় প্রদান করে বিচার বিভাগ ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো : আসামীরা পরস্পর যোগসাজশ করে হত্যার উদ্দেশ্যে অনাধিকার প্রবেশ পূর্বক মারধর করে জখম, চুরি ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজার দরগাহপাড়ার মৃত নবী হোছনের পুত্র মোঃ নুরুল হক ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মৃত আবুল হোসেনের পুত্র নুরুল আলম সহ ৬ জনকে আসামী করা হয়। যার জিআর মামলা নম্বর :
জি.আর-৩২/২০১৮(সদর) এবং কক্সবাজার সদর থানার মামলা নম্বর-৩২/২০১৮ ইংরেজি। ধারা- ফৌজদারী দন্ডবিধির ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৪, ৩০৭, ৩৭৯, ৫০৬ ও ৩৪।
মামলায় বিজ্ঞ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মুহাম্মদ ফারুকী মামলার বাদী, ভিকটিম, তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) এবং ডাক্তার সহ ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা যুক্তিতর্ক শেষে আসামী নুরুল আলম এর বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ প্রমানিত হওয়ায় আদালত অপরাধের শাস্তি স্বরূপ তাকে ১৫ দফা প্রবেশন পালনের আদেশ প্রচার করেন এবং অপর ৫ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।
রায়ে বিজ্ঞ বিচারকের দেওয়া প্রবেশন আদেশের ১৫ টি শর্ত হচ্ছে-(১) বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক নিযুক্ত প্রবেশন অফিসারের তত্তাবধানে নিজেকে সমর্পন করব। (২) আমার বাসস্থান এবং জীবিকার উপায় সম্পর্কে প্রবেশন অফিসারকে নিয়মিত অবহিত রাখিব (৩) সৎ ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করব এবং সদোপায়ে জীবিকা অর্জনের জন্য সচেষ্ট থাকব (৪) বিজ্ঞ বিচারক/আদালত কর্তৃক তলব করা হলে তদানুসারে হাজির হয়ে দন্ড ভোগ করিতে বাধ্য থাকব (৫) সময় সময় প্রবেশন অফিসার কর্তৃক প্রদেয় আইনানুগ মৌখিক বা লিখিত উপদেশ সমূহ মেনে চলব (৬) বিজ্ঞ বিচারক/আদালতের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে বাংলাদেশ ত্যাগ করে কোথাও যাবোনা (৭) দুশ্চরিত্র লোকের সহিত মেলামেশা করব না (৮) কোন প্রকার লাম্পট্য কাজে লিপ্ত হবোনা (৯) দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য কোন প্রকার অপরাধ কর্মে লিপ্ত হবোনা (১০) স্বেচ্ছায় বা কাহারও প্ররোচনায় শান্তি ভংগের কোন কাজে লিপ্ত হবোনা অথবা অংশগ্রহণ করব না (১১) কোন প্রকার মাদকদ্রব্য সেবন করব না, বহন করবনা, হেফাজতে রাখবনা এবং কোন মাদকদ্রব্য সেবী বা বহনকারী বা হেফাজতকারীর সহিত মেলামেশা করবনা। (১২) আমি আমার ধর্মীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাসময়ে পালন করব। (১৩) আমি আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ১০০টি বৃক্ষ রোপন করে প্রবেশন অফিসারের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করব। (১৪)উক্ত গাছগুলো আমি পরবর্তী ২ বছর পরিচর্যা করব। (১৫) আমি প্রতিমাসে ১ বার আমার বাড়ীর পাশে সরকারি শিশু পরিবারে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজকর্ম সম্পাদন করব।
উল্লেখিত প্রবেশন আদেশ দিয়ে রায় ঘোষনা দেশের আদালত অঙ্গনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ধরনের ব্যতিক্রমী ও গঠনমূলক কর্ম সম্পাদন করার রায় ঘোষনার খবরে বুধবার কক্সবাজার আদালত পাড়ায় বেশ কৌতুহল সৃষ্টি হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।